ফেনীর সোনাগাজী ও ফুলগাজী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমি ও জনপদে ফসল বিনাশি ফল আর্মিওয়ার্ম পোকার অস্বাভাবিক উপদ্রব দেখা দিয়েছে। পোকার এ উপদ্রবকে নতুন আতঙ্ক হিসেবে দেখছেন স্থানীয় কৃষকরা।
ফেনীতে জুলাই-আগস্টে পরপর তিন দফা বন্যায় জনপদে কৃষিখাতে হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি কৃষকদের। ফলে আগামীতে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, সপ্তাহখানেক ধরে সোনাগাজী উপজেলার আমিরাবাদ, নবাবপুর ও ফুলগাজী উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থানে ফল আর্মিওয়ার্ম পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। বন্যার পানিতে এ পোকা ভেসে এসেছে বলে ধারণা করছেন স্থানীয় কৃষকরা।
কৃষি বিভাগ বলছে, ফসলের জন্য ক্ষতিকর এ পোকা দমনে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করছেন তারা। অন্যদিকে কৃষকরা বলছেন, জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ করেও পোকা দমন করা যাচ্ছে না।
সোনাগাজীর আমিরাবাদ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কালো রঙের অসংখ্য পোকা ফসলের মাঠে, রাস্তায়, বাড়িঘর ও আশপাশের বন-জঙ্গলে বিচরণ করছে। কৃষি কর্মকর্তাদের মতে এই পোকা পানিতে থাকতে পারে না। তবে সরেজমিনে দেখা গেছে বিপরীত চিত্র। সেখানে পুকুর, ডোবা-নালাসহ আমন ধানের মাঠে পানি থাকলেও পোকাগুলো পানির ওপর দিয়েই ভেসে বেড়াচ্ছে ও একস্থান হতে অন্যস্থানে চলাচল করতে দেখা গেছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, বন্যার পর জমিতে আমন ধান আবাদ করেছেন তারা। এছাড়া বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আগাম শীতকালীন সবজি লাউ, কুমড়া, করলা, ঝিঙ্গা, পাট শাক আবাদ করেছেন। সপ্তাহখানেক পর সেগুলো বিক্রির উপযোগী হতো। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে এ পোকার ব্যাপক আক্রমণ। পোকার আক্রমণ কমাতে জমিতে কীটনাশক ছিটিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। পোকার আক্রমণে ফসল উৎপাদনে বিপর্যয়ের শঙ্কা করছেন তারা।
আমিরাবাদের আহম্মদপুর এলাকার কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, ১২ শতক জমিতে লাউ গাছের চারা রোপণ করেছিলাম। হঠাৎ এ পোকা এসে সবগুলো গাছের মূল কেটে দিয়েছে। এতে গাছগুলো শুকিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষি অফিসের পরামর্শে কীটনাশক প্রয়োগ করেও লাভ হয়নি। পোকাগুলোকে কীটনাশকের পানিতে রাখলেও মরে না।
চর কৃষ্ণজয় গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, এতো পোকা আমার ৫৫ বছরের জীবনে কখনো দেখিনি। দেখতেও কেমন ভয় লাগে, কাছে গেলে শরীরে উঠে যায়। জমির পাশাপাশি এখন বাড়িঘরেও ঢুকে পড়েছে। এভাবে চললে মাঠের ফসল আর বাড়িতে তোলা সম্ভব নয়।
কৃষক মোস্তফা বলেন, বন্যার ক্ষতি কাটাতে ৬০ শতক জমিতে আগাম শাকসবজি আবাদ করেছিলাম। এখন সেগুলোও পোকায় নষ্ট করে ফেলছে। চেষ্টা করেও ফসল বাঁচাতে পারছি না।
এ ব্যাপারে সোনাগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাঈন উদ্দিন আহমেদ সোহাগ বলেন, এ পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষায় কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া পোকা দমনে ইউনিয়ন পর্যায়ে আমাদের টিম কাজ করছে। কৃষি বিভাগ মাঠপর্যায়ে থেকে কৃষকদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে।
একই প্রসঙ্গে ফুলগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খোরশেদ আলম বলেন, ফুলগাজীর আমজাদহাট ইউনিয়নের মনিপুর ও মুন্সীরহাটের দক্ষিণ শ্রীপুর এলাকায় পোকার আক্রমণ বেশি লক্ষ করা গেছে। পোকার উপদ্রব ঠেকাতে তিন ধরনের ওষুধ ছিটানো হয়েছে। কীটনাশক নাইট্রো ও কোরাজেন মিশ্রিত স্প্রে করে পোকা দমন করা হচ্ছে। বন্যার সময় কিছু কীটের লার্ভা ফসলের মাঠে আগাছার সঙ্গে মিশে থাকায় এ পোকা বেড়েছে।
কেবল ফসলের মাঠ নয়, ঘরবাড়িতেও ফল আর্মিওয়ার্ম পোকার উপদ্রব বেড়েছে। সোনাগাজীর আমিরাবাদ ইউনিয়নের চর কৃষ্ণজয় গ্রামের কৃষক ছুট্টো মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার বাড়ির রাস্তা, বসতঘর, টিউবওয়েল, শৌচাগার, বাড়ির আঙিনায় হাজার হাজার পোকা কিলবিল করছে।
কৃষক ছুট্টো মিয়া বলেন, এ ভয়ংকর পোকা আগে কখনো দেখিনি। বাড়িতে এত পোকা ঢুকেছে যে আমরা ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করেও পারছি না। রাতে ঘুমালে পোকা গায়ে উঠে যায়। শৌচাগারে পানিও ঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারছি না। বাড়ির চারদিকে কীটনাশক ছিটিয়েও কাজ হচ্ছে না, দিন দিন পোকা বাড়ছে। এ অবস্থায় বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।